কক্সবাজার থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনারের গোপন প্রস্থান : নারী সংশ্লিষ্ট গুঞ্জনের ঝড় কূটনৈতিক মহলে !

কক্সবাজার থেকে পাকিস্তান হাইকমিশনারের গোপন প্রস্থান : নারী সংশ্লিষ্ট গুঞ্জনের ঝড় কূটনৈতিক মহলে !

দ্য বেঙ্গল লেন্স
ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫

পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফছবি: পাকিস্তান হাইকমিশনের ফেসবুক থেকে নেওয়া

পাকিস্তানি হাইকমিশনারের রহস্যময় প্রস্থান: ঢাকার কূটনৈতিক মহলে ঝড়ের আভাস

ঢাকা, ১৩ মে ২০২৫

একটি আকস্মিক ঘটনা ঢাকার কূটনৈতিক মহলকে স্তব্ধ করে দিয়েছে। পাকিস্তানের হাইকমিশনার সৈয়দ আহমেদ মারুফ, যিনি গত নয় মাসে বাংলাদেশের রাজনৈতিক ও কূটনৈতিক মঞ্চে এক অপরিহার্য ব্যক্তিত্ব হয়ে উঠেছিলেন, হঠাৎ ছুটিতে গিয়ে দেশ ত্যাগ করেছেন। রোববার, ১১ মে, সন্ধ্যা ৭টা ৪০ মিনিটে এমিরেটস এয়ারলাইন্সের ইকে-৫৮৭ ফ্লাইটে দুবাই হয়ে ইসলামাবাদের উদ্দেশে তিনি ঢাকা ছাড়েন। এই প্রস্থানের পেছনে কি কেবল একটি সাধারণ ছুটির গল্প, নাকি লুকিয়ে আছে গভীর কূটনৈতিক ষড়যন্ত্র? ঢাকার কূটনৈতিক পাড়ায় এখন এই প্রশ্নই ঝড় তুলেছে।

রহস্যের সূচনা: হঠাৎ তলব ও প্রস্থান

গত ৯ মে, কক্সবাজার সফরের মাঝে পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে জরুরি তলব পান সৈয়দ আহমেদ মারুফ। এই তলবের পর তিনি দ্রুত ঢাকায় ফিরে আসেন এবং মাত্র দুই দিনের মধ্যে দেশ ত্যাগ করেন। পাকিস্তান হাইকমিশন বাংলাদেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে জানিয়েছে, মারুফের অনুপস্থিতিতে উপহাইকমিশনার মুহাম্মদ আসিফ ভারপ্রাপ্ত হাইকমিশনার হিসেবে দায়িত্ব পালন করবেন। কিন্তু ছুটির সময়কাল নিয়ে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেয়নি হাইকমিশন। অনানুষ্ঠানিকভাবে জানা গেছে, তিনি দুই সপ্তাহের ছুটিতে আছেন। তবে এই তথ্য কি পুরোপুরি সত্য, নাকি এটি কেবল একটি আড়াল? কূটনৈতিক মহল এখন এই প্রশ্নের উত্তর খুঁজছে।

কূটনৈতিক মঞ্চে মারুফের উত্থান

২০২৩ সালের ডিসেম্বরে ঢাকায় হাইকমিশনার হিসেবে যোগ দেওয়ার পর থেকে সৈয়দ মারুফ বাংলাদেশের কূটনৈতিক মঞ্চে একটি শক্তিশালী উপস্থিতি গড়ে তুলেছিলেন। গত ৫ আগস্ট শেখ হাসিনা সরকারের পতনের পর, অন্তর্বর্তী সরকারের আমলে তিনি ঢাকা-ইসলামাবাদ সম্পর্ককে নতুন গতি দেওয়ার ক্ষেত্রে অত্যন্ত সক্রিয় ভূমিকা পালন করেন। বিভিন্ন উপদেষ্টা, সরকারি-বেসরকারি প্রতিষ্ঠানের সঙ্গে নিয়মিত বৈঠক, গণমাধ্যমে সরব উপস্থিতি এবং বাংলাদেশের বিভিন্ন জেলায় তার সফর তাকে একজন প্রভাবশালী কূটনীতিক হিসেবে প্রতিষ্ঠিত করেছিল। তাহলে এমন এক গুরুত্বপূর্ণ সময়ে তার এই আকস্মিক প্রস্থান কেন? এই প্রশ্ন এখন কূটনৈতিক মহলের প্রতিটি কোণে প্রতিধ্বনিত হচ্ছে।

Open photo
পাকিস্তানের হাইকমিশনার আহমেদ মারুফ বৃহস্পতিবার রাত্রে কক্সবাজারে । ছবি: সংগ্রহীত

কক্সবাজারের রাত: গুজবের উৎস?

মারুফের সাম্প্রতিক কক্সবাজার সফর নিয়ে কূটনৈতিক পাড়ায় গুঞ্জনের ঝড় বয়ে যাচ্ছে। সূত্র জানায়, তিনি উখিয়ার হোটেল সি-পার্লে অবস্থান করেছিলেন। সেখানে তার সঙ্গে ছিলেন একজন বাংলাদেশি সরকারি নারী কর্মকর্তা, যিনি একটি ব্যাংকের সহকারী পরিচালক হিসেবে কর্মরত। গুজব রয়েছে, এই নারী কর্মকর্তার সঙ্গে মারুফের ঘনিষ্ঠ সম্পর্ক নিয়ে কূটনৈতিক মহলে তীব্র আলোচনা চলছে। কেউ কেউ দাবি করেছেন, গত ৯ মে মারুফ নিজের গাড়িতে ওই নারী ও তার এক বন্ধুকে নিয়ে কক্সবাজারে ঘুরে বেড়িয়েছেন। স্থানীয় সূত্রের দাবি, হোটেল সি-পার্লে তাদের একসঙ্গে দেখা গেছে, যা কূটনৈতিক মহলে নতুন বিতর্কের জন্ম দিয়েছে। এই ঘটনা কি কেবলই একটি সাধারণ সফর, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর রহস্য? যদিও এসব অভিযোগের কোনো সুস্পষ্ট প্রমাণ পাওয়া যায়নি, তবুও এই গুজব ঢাকার কূটনৈতিক পাড়াকে উত্তপ্ত করে তুলেছে।

ষড়যন্ত্রের ছায়া: কী লুকিয়ে আছে?

কূটনৈতিক মহলে কান পাতলে শোনা যায় আরও চাঞ্চল্যকর গুজব। কেউ কেউ বলছেন, মারুফের এই হঠাৎ ছুটির পেছনে রয়েছে আন্তর্জাতিক কূটনৈতিক চাপ। গুজব রয়েছে, তিনি বাংলাদেশের অদ্যন্তরীণ রাজনৈতিক বিষয়ে অতিরিক্ত সক্রিয়তা দেখিয়েছেন, যা কিছু প্রভাবশালী মহলের পছন্দ হয়নি। একটি তত্ত্ব দাবি করে, কক্সবাজার সফরের সময় মারুফ কোনো গোপন তথ্য ফাঁস করে থাকতে পারেন, যা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের জন্য গুরুতর উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে। আরও নাটকীয়ভাবে, কেউ কেউ বলছেন, মারুফের প্রস্থানের পেছনে কাজ করছে তৃতীয় কোনো দেশের গোয়েন্দা সংস্থা, যারা বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কের উন্নতিকে বাধাগ্রস্ত করতে চায়।

একটি চাঞ্চল্যকর গুজব হলো, কক্সবাজারে মারুফ কোনো গোপন বৈঠকে অংশ নিয়েছিলেন, যেখানে বাংলাদেশের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক পরিস্থিতি নিয়ে স্পর্শকাতর আলোচনা হয়। কেউ কেউ এমনও দাবি করেছেন, তার এই সফরে তিনি বাংলাদেশের কিছু প্রভাবশালী ব্যক্তির সঙ্গে গোপন চুক্তির চেষ্টা করছিলেন, যা পাকিস্তানের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের কাছে গ্রহণযোগ্য হয়নি। আরেকটি তত্ত্ব হলো, মারুফের কার্যকলাপ বাংলাদেশের গোয়েন্দা সংস্থার নজরে এসেছিল, যারা তার অতিরিক্ত সক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন হয়ে তাকে দেশ ত্যাগে বাধ্য করেছে। তবে এসব কেবলই ষড়যন্ত্র তত্ত্ব, যার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি।

কূটনৈতিক নিয়মের প্রশ্ন

কূটনৈতিক প্রথা অনুযায়ী, কোনো রাষ্ট্রদূত ছুটিতে গেলে স্বাগতিক দেশের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়কে আনুষ্ঠানিকভাবে অবহিত করা হয়। ছুটির সময়কাল এবং ভারপ্রাপ্ত রাষ্ট্রদূতের নাম স্পষ্টভাবে জানানো হয়। কিন্তু মারুফের ক্ষেত্রে এই প্রক্রিয়ায় একটি অস্পষ্টতা লক্ষ্য করা গেছে। পাকিস্তান হাইকমিশন ছুটির সময়কাল সম্পর্কে কোনো স্পষ্ট তথ্য দেয়নি, যা কূটনৈতিক মহলে আরও সন্দেহের জন্ম দিয়েছে। এই অস্পষ্টতা কি ইচ্ছাকৃত, নাকি কেবল প্রশাসনিক ত্রুটি? এই প্রশ্ন এখন কূটনৈতিক আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে।

সমাজমাধ্যমে তুমুল আলোচনা

সৈয়দ মারুফের এই আকস্মিক প্রস্থান নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলছে তুমুল আলোচনা। কেউ কেউ এটিকে ‘কূটনৈতিক ষড়যন্ত্রের’ অংশ হিসেবে দেখছেন, আবার কেউ বলছেন, এটি পাকিস্তানের অভ্যন্তরীণ রাজনৈতিক সংকটের প্রতিফলন। একটি গুজব দাবি করে, মারুফের প্রস্থানের পেছনে গোয়েন্দা সংস্থার হাত রয়েছে, যারা তার অতিরিক্ত সক্রিয়তায় উদ্বিগ্ন হয়ে উঠেছিল। আরেকটি পোস্টে দাবি করা হয়েছে, মারুফের কক্সবাজার সফরে তিনি কোনো আন্তর্জাতিক গোয়েন্দা সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছিলেন, যা তার প্রস্থানের মূল কারণ। এই জল্পনা কতটা সত্য, তা এখনও অজানা। তবে এই ঘটনা সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমকে একটি উত্তপ্ত আলোচনার কেন্দ্রে পরিণত করেছে।

রহস্যের পর্দা কবে উন্মোচিত হবে?

সৈয়দ আহমেদ মারুফের হঠাৎ ছুটি এবং ঢাকা ত্যাগ নিয়ে যত রহস্য, ততই জল্পনা। তিনি কি সত্যিই কেবল ছুটিতে গেছেন, নাকি এর পেছনে লুকিয়ে আছে কোনো গভীর কূটনৈতিক খেলা? কক্সবাজারের সেই রাতের ঘটনা কি শুধুই গুজব, নাকি তাতে লুকিয়ে আছে কোনো গোপন সত্য? তার এই প্রস্থান কি বাংলাদেশ-পাকিস্তান সম্পর্কে নতুন মোড় আনবে, নাকি এটি কেবল একটি অস্থায়ী ঝড়? সময়ই হয়তো এই রহস্যের জবাব দেবে। তবে একটি বিষয় নিশ্চিত—এই ঘটনা ঢাকার কূটনৈতিক মহলকে দীর্ঘদিনের জন্য উত্তেজনার মধ্যে রাখবে।

দ্রষ্টব্য: এই নাটকীয় ঘটনার পরিপ্রেক্ষিতে কূটনৈতিক মহলের গুঞ্জন এবং সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে চলা তুমুল আলোচনা এই রহস্যকে আরও ঘনীভূত করেছে। আমরা নিরপেক্ষভাবে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করছি এবং কোনো অপ্রমাণিত তথ্যকে সমর্থন করছি না। উপরে বর্ণিত ষড়যন্ত্র তত্ত্বগুলো কেবল গুজব হিসেবেই বিবেচিত হচ্ছে, যার কোনো প্রমাণ এখনও পাওয়া যায়নি। তবুও এই ঘটনা বাংলাদেশের কূটনৈতিক ইতিহাসে একটি রহস্যময় অধ্যায় হয়ে থাকবে।

Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *