ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ: অস্বাভাবিক নিয়োগ ?

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানির পরিচালনা পর্ষদ: অস্বাভাবিক নিয়োগ ?
{"remix_data":[],"remix_entry_point":"challenges","source_tags":["local"],"origin":"unknown","total_draw_time":0,"total_draw_actions":0,"layers_used":0,"brushes_used":0,"photos_added":0,"total_editor_actions":{},"tools_used":{"remove":1},"is_sticker":false,"edited_since_last_sticker_save":true,"containsFTESticker":false,"used_sources":{"version":1,"sources":[{"id":"411061032000211","type":"ugc"}]}}

দ্য ব্যাঙ্গল লেন্সের বিশেষ অনুসন্ধানী প্রতিবেদন


ক্ষমতার গল্পে এক অপ্রত্যাশিত মোড়

ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেড (ডিপিডিসি) বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতের একটি মেরুদণ্ড। রাজধানী ঢাকা ও তার আশপাশের এলাকায় বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে নিয়োজিত এই প্রতিষ্ঠানটি কোটি কোটি মানুষের জীবনযাত্রার সঙ্গে অঙ্গাঙ্গিভাবে জড়িত। সকালের কফি মেশিন থেকে শুরু করে রাতের ফ্যান, ডিপিডিসির কার্যক্রম সাধারণ মানুষের দৈনন্দিন জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে প্রভাব ফেলে। কিন্তু সম্প্রতি, এই প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের সদস্য তালিকায় এমন কিছু নাম প্রকাশ পেয়েছে, যা জনমনে বিস্ময়, সন্দেহ এবং প্রশ্নের জন্ম দিয়েছে।

তালিকার মধ্যে রয়েছেন মোহাম্মদ শফিকুল আলম, যিনি প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে দায়িত্ব পালন করছেন। এছাড়া, আরেকটি চমকপ্রদ নাম হলো ওয়াসীম আলিম, বাংলাদেশের ই-কমার্স জায়ান্ট চালডাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা (সিইও)। এই দুই ব্যক্তির উপস্থিতি ডিপিডিসির মতো একটি পাবলিক ইউটিলিটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে কেন এবং কীভাবে সম্ভব হলো? এই নিয়োগ কি স্বচ্ছতা ও দায়বদ্ধতার মানদণ্ড পূরণ করে? নাকি এর পেছনে রয়েছে কোনো গোপন রাজনৈতিক বা ব্যক্তিগত এজেন্ডা?

দ্য ব্যাঙ্গল লেন্স এই প্রশ্নগুলোর উত্তর খুঁজতে গিয়ে একটি গভীর অনুসন্ধান শুরু করেছে। এই প্রতিবেদনে আমরা ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের গঠন, এই দুই ব্যক্তির নিয়োগের পটভূমি, এবং এর সম্ভাব্য প্রভাব নিয়ে বিশ্লেষণ করব। আমাদের লক্ষ্য হলো জনগণের পক্ষ থেকে সত্য উদঘাটন করা, প্রশ্ন তোলা, এবং একটি নিরপেক্ষ কিন্তু তীক্ষ্ণ দৃষ্টিভঙ্গি তুলে ধরা। আমরা কাউকে সরাসরি অভিযুক্ত করছি না, তবে জনগণের মনে যে প্রশ্নগুলো ঘুরছে, সেগুলোর উত্তর খোঁজার দায়িত্ব আমরা নিয়েছি।


পরিচালনা পর্ষদ: কারা এবং কেন?

ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, প্রতিষ্ঠানটির পরিচালনা পর্ষদে বেশ কয়েকজন উচ্চপদস্থ কর্মকর্তা রয়েছেন। তালিকাটি “জ্যেষ্ঠতার ক্রমানুসারে নয়” বলে উল্লেখ করা হয়েছে, যা ইতিমধ্যেই কিছুটা বিভ্রান্তিকর। তালিকার শীর্ষে রয়েছেন মোঃ হাবিবুর রহমান, বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব এবং পরিচালনা পর্ষদের সভাপতি। এটি প্রত্যাশিত, কারণ বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পৃক্ত একজন সচিবের এমন পদে থাকা যৌক্তিক। তবে তালিকার দ্বিতীয় নামটি হলো মোহাম্মদ শফিকুল আলম, প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব। এছাড়া, তালিকায় আরেকটি নাম হলো ওয়াসীম আলিম, চালডালের সিইও।

এই দুই ব্যক্তির উপস্থিতি কেন এতটা আলোচনার বিষয়? ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে সাধারণত বিদ্যুৎ খাত, অর্থ মন্ত্রণালয়, বা সংশ্লিষ্ট প্রশাসনিক ক্ষেত্রের অভিজ্ঞ ব্যক্তিদের দেখা যায়। তাঁদের দায়িত্ব হলো প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণ, কৌশলগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং জনগণের স্বার্থে বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। কিন্তু একজন প্রেস সচিব এবং একজন ই-কমার্স সিইও-এর উপস্থিতি এই প্রথাগত ধারার বাইরে। এটি কি সরকারের নতুন দৃষ্টিভঙ্গি, যেখানে ভিন্ন খাতের দক্ষতাকে কাজে লাগানোর চেষ্টা করা হচ্ছে? নাকি এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উদাহরণ?


মোহাম্মদ শফিকুল আলম: প্রেস সচিবের অপ্রত্যাশিত ভূমিকা

মোহাম্মদ শফিকুল আলম প্রধান উপদেষ্টার প্রেস সচিব হিসেবে একটি গুরুত্বপূর্ণ পদে দায়িত্ব পালন করছেন। তাঁর কাজ হলো সরকারের নীতি, সিদ্ধান্ত এবং তথ্য গণমাধ্যমের মাধ্যমে জনগণের কাছে পৌঁছে দেওয়া। তিনি একজন দক্ষ জনসংযোগ বিশেষজ্ঞ হতে পারেন, কিন্তু বিদ্যুৎ খাতের প্রযুক্তিগত এবং প্রশাসনিক জটিলতার সঙ্গে তাঁর অভিজ্ঞতার সম্পর্ক কতটা? ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদে তাঁর নিয়োগ নিয়ে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে আলোচনা শুরু হয়েছে। একটি এক্স পোস্টে তাঁর এই পদকে “আলোকিত” হিসেবে ব্যঙ্গাত্মকভাবে উল্লেখ করা হয়েছে, যা জনগণের মনে সন্দেহের জন্ম দিয়েছে।

প্রশ্ন হলো, একজন প্রেস সচিব কীভাবে ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের নীতিনির্ধারণী পর্ষদে অবদান রাখেন? তাঁর দক্ষতা কি বিদ্যুৎ সরবরাহের চ্যালেঞ্জ, যেমন লোডশেডিং, জ্বালানি সংকট, বা বিতরণ ব্যবস্থার উন্নয়নের ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক? নাকি এই নিয়োগ একটি রাজনৈতিক পুরস্কার বা ক্ষমতার প্রভাব প্রদর্শনের একটি উপায়? জনগণের মনে এই প্রশ্নগুলো ঘুরছে, বিশেষ করে যখন ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের কার্যক্রম সরাসরি তাদের জীবনযাত্রার সঙ্গে জড়িত।

একটি সম্ভাব্য যুক্তি হতে পারে যে, মোহাম্মদ শফিকুল আলমের জনসংযোগের দক্ষতা ডিপিডিসির জনসাধারণের সঙ্গে যোগাযোগ বা স্বচ্ছতা বাড়ানোর ক্ষেত্রে কাজে লাগতে পারে। কিন্তু পরিচালনা পর্ষদের দায়িত্ব কেবল জনসংযোগ নয়; এটি নীতিনির্ধারণ, প্রযুক্তিগত সিদ্ধান্ত গ্রহণ, এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার মতো জটিল কাজের সঙ্গে জড়িত। এই ক্ষেত্রে তাঁর অভিজ্ঞতা কতটা প্রাসঙ্গিক, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকেই যায়।


ওয়াসীম আলিম: বেসরকারি খাত থেকে পাবলিক ইউটিলিটিতে

আরেকটি চমকপ্রদ নাম হলো ওয়াসীম আলিম, চালডাল লিমিটেডের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা। চালডাল বাংলাদেশের ই-কমার্স খাতে একটি উজ্জ্বল নাম। দ্রুত ডেলিভারি, গ্রাহক সেবা, এবং উদ্ভাবনী ব্যবসায়িক মডেলের মাধ্যমে চালডাল দেশের অন্যতম সফল স্টার্টআপ হিসেবে নিজেকে প্রতিষ্ঠিত করেছে। ওয়াসীম আলিমের ব্যবসায়িক দক্ষতা এবং উদ্যোক্তা মনোভাব নিঃসন্দেহে প্রশংসনীয়। কিন্তু ই-কমার্সের সঙ্গে বিদ্যুৎ বিতরণের সম্পর্ক কী? তিনি কেন এবং কীভাবে ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদে স্থান পেলেন?

বেসরকারি খাতের প্রতিনিধিত্ব সরকারি প্রতিষ্ঠানে নতুন কিছু নয়। অনেক সময় ব্যবসায়িক দৃষ্টিভঙ্গি, দক্ষ ব্যবস্থাপনা, বা উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আনার জন্য এমন নিয়োগ করা হয়। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াসীম আলিমের দক্ষতা ডিপিডিসির ব্যবস্থাপনা বা গ্রাহক সেবার ক্ষেত্রে নতুন দৃষ্টিভঙ্গি আনতে পারে। কিন্তু ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানে, যেখানে প্রযুক্তিগত দক্ষতা, জ্বালানি নীতি, এবং পাবলিক সেক্টরের জটিলতা সম্পর্কে গভীর জ্ঞান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, তাঁর উপস্থিতি কতটা যুক্তিযুক্ত?


নিয়োগ প্রক্রিয়া: স্বচ্ছতার অভাব?

ডিপিডিসির ওয়েবসাইটে পরিচালনা পর্ষদের সদস্যদের তালিকা প্রকাশিত হলেও তাদের নিয়োগের প্রক্রিয়া সম্পর্কে বিস্তারিত কোনো তথ্য নেই। কীভাবে এই ব্যক্তিদের নির্বাচন করা হয়েছে? কী কী যোগ্যতার ভিত্তিতে তাঁরা এই দায়িত্ব পেয়েছেন? এই প্রশ্নগুলোর উত্তর না পাওয়া পর্যন্ত জনগণের মনে সন্দেহ থাকবে। বিশেষ করে, যখন পরিচালনা পর্ষদে এমন ব্যক্তিদের দেখা যাচ্ছে, যাদের পেশাগত পটভূমি বিদ্যুৎ খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত নয়।

সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠান, যেটি জনগণের টাকায় পরিচালিত হয় এবং জনগণের সেবার জন্য দায়বদ্ধ, সেখানে এই ধরনের অস্বাভাবিক নিয়োগ জনমনে অসন্তোষ তৈরি করতে পারে। আমরা জানতে চাই, এই নিয়োগগুলো কি সরকারের উচ্চপর্যায়ের নির্দেশে হয়েছে? নাকি এটি একটি নীতিগত সিদ্ধান্ত, যার পেছনে রয়েছে দীর্ঘমেয়াদী কোনো পরিকল্পনা?


বিদ্যুৎ খাতের চ্যালেঞ্জ এবং দক্ষতার প্রয়োজন

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাত বর্তমানে নানা চ্যালেঞ্জের মুখোমুখি। লোডশেডিং, বিদ্যুৎ সরবরাহের অস্থিরতা, জ্বালানি সংকট, এবং অবকাঠামোগত সীমাবদ্ধতা জনগণের জীবনযাত্রাকে প্রভাবিত করছে। গত কয়েক বছরে বিদ্যুৎ খাতে উল্লেখযোগ্য অগ্রগতি হলেও, এখনও অনেক ক্ষেত্রে উন্নতির প্রয়োজন রয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদে এমন ব্যক্তিদের প্রয়োজন, যারা এই খাতের জটিলতা বুঝতে পারেন এবং সমাধান প্রদানে দক্ষ।

উদাহরণস্বরূপ, পরিচালনা পর্ষদে বিদ্যুৎ বিভাগের সচিব মোঃ হাবিবুর রহমান বা প্রকৌশলী বিকাশ দেওয়ানের উপস্থিতি যুক্তিযুক্ত মনে হয়, কারণ তাঁদের পেশাগত পটভূমি এই খাতের সঙ্গে সরাসরি সম্পর্কিত। তাঁরা বিদ্যুৎ খাতের নীতিনির্ধারণ, প্রযুক্তিগত উন্নয়ন, এবং আর্থিক ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে অবদান রাখতে পারেন। কিন্তু মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং ওয়াসীম আলিমের পেশাগত অভিজ্ঞতা কি এই জটিল ক্ষেত্রে প্রাসঙ্গিক? তাঁদের নিয়োগ কি ডিপিডিসির কার্যকারিতা বাড়াবে ?

বিদ্যুৎ খাতের চ্যালেঞ্জগুলোর মধ্যে রয়েছে জ্বালানি সংকট মোকাবিলা, নবায়নযোগ্য জ্বালানির ব্যবহার বৃদ্ধি, এবং বিতরণ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণ। এই ক্ষেত্রগুলোতে প্রযুক্তিগত এবং নীতিগত দক্ষতার প্রয়োজন। মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং ওয়াসীম আলিমের দক্ষতা তাঁদের নিজ নিজ ক্ষেত্রে প্রশংসনীয় হলেও, এই নির্দিষ্ট চ্যালেঞ্জগুলোর সঙ্গে তাঁদের অভিজ্ঞতার সংযোগ কতটা, তা নিয়ে প্রশ্ন থেকে যায়।


কে জবাব দেবে?

ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের এই নিয়োগ নিয়ে জনগণের মনে প্রশ্ন জমা হচ্ছে। সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন নিয়োগ কি জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার পরিচয় দেয়? নাকি এটি ক্ষমতার অপব্যবহারের একটি উদাহরণ? আমরা সরাসরি কাউকে অভিযুক্ত করছি না, কিন্তু এই প্রশ্নগুলো জনগণের পক্ষ থেকে উত্থাপন করা আমাদের দায়িত্ব।

একটি স্বচ্ছ ও দক্ষ বিদ্যুৎ খাত জনগণের মৌলিক চাহিদা। ডিপিডিসির মতো একটি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের ক্ষেত্রে স্বচ্ছতা এবং যোগ্যতার মানদণ্ড মেনে চলা অত্যন্ত জরুরি। আমরা সরকার এবং ডিপিডিসি কর্তৃপক্ষের কাছে এই নিয়োগের পেছনের যুক্তি এবং প্রক্রিয়া সম্পর্কে স্পষ্ট ব্যাখ্যা প্রত্যাশা করি। জনগণ জানতে চায়, এই নিয়োগগুলো কি তাদের স্বার্থ রক্ষা করবে, নাকি এটি কেবল ক্ষমতার খেলার একটি অংশ?


ডিপিডিসির ইতিহাস এবং গুরুত্ব

ডিপিডিসি ২০০৮ সালে প্রতিষ্ঠিত হয়, যার লক্ষ্য ছিল ঢাকা শহর ও তার আশপাশের এলাকায় নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ নিশ্চিত করা। প্রতিষ্ঠানটি বিদ্যুৎ, জ্বালানি ও খনিজ সম্পদ মন্ত্রণালয়ের অধীনে পরিচালিত হয় এবং এটি বাংলাদেশের অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়নে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করে। ডিপিডিসির কার্যক্রমের মধ্যে রয়েছে বিদ্যুৎ বিতরণ, গ্রাহক সেবা, এবং অবকাঠামোগত উন্নয়ন।

বাংলাদেশের বিদ্যুৎ খাতে ডিপিডিসির ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ, কারণ এটি দেশের অর্থনৈতিক কেন্দ্র ঢাকার বিদ্যুৎ সরবরাহের দায়িত্বে রয়েছে। শিল্প, বাণিজ্য, এবং গৃহস্থালি কার্যক্রমের জন্য নিরবচ্ছিন্ন বিদ্যুৎ সরবরাহ অপরিহার্য। এমন একটি প্রতিষ্ঠানে পরিচালনা পর্ষদের সিদ্ধান্ত গ্রহণের ক্ষেত্রে যোগ্যতা এবং দক্ষতা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। এই প্রেক্ষাপটে মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং ওয়াসীম আলিমের নিয়োগ আরও বেশি প্রশ্নবিদ্ধ হয়ে উঠেছে।


সম্ভাব্য প্রভাব: জনগণের উপর কী প্রভাব পড়বে?

ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদের নিয়োগের প্রভাব সরাসরি জনগণের উপর পড়তে পারে। যদি পর্ষদের সদস্যরা এই খাতের জটিলতা বুঝতে না পারেন বা প্রয়োজনীয় দক্ষতার অভাব থাকে, তবে এটি প্রতিষ্ঠানের কার্যকারিতা এবং জনগণের সেবার মানকে প্রভাবিত করতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, লোডশেডিং বা বিদ্যুৎ সরবরাহে ব্যাঘাতের সমস্যা সমাধানে কার্যকর নীতি গ্রহণে বিলম্ব হতে পারে। এছাড়া, এই ধরনের নিয়োগ জনগণের মনে সরকারি প্রতিষ্ঠানের উপর আস্থার সংকট তৈরি করতে পারে।

অন্যদিকে, যদি এই নিয়োগগুলো সত্যিই নতুন দৃষ্টিভঙ্গি বা উদ্ভাবনী চিন্তাভাবনা আনার জন্য করা হয়ে থাকে, তবে এটি ডিপিডিসির জন্য ইতিবাচক ফল বয়ে আনতে পারে। উদাহরণস্বরূপ, ওয়াসীম আলিমের ব্যবসায়িক দক্ষতা ডিপিডিসির গ্রাহক সেবা বা ডিজিটাল প্ল্যাটফর্মের উন্নয়নে কাজে লাগতে পারে। একইভাবে, মোহাম্মদ শফিকুল আলমের জনসংযোগের অভিজ্ঞতা প্রতিষ্ঠানের স্বচ্ছতা বা জনগণের সঙ্গে যোগাযোগ বাড়াতে সাহায্য করতে পারে। কিন্তু এই সম্ভাবনাগুলো কেবল তখনই বাস্তবায়িত হবে, যদি নিয়োগ প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হয় এবং তাঁদের ভূমিকা স্পষ্টভাবে জনগণের কাছে ব্যাখ্যা করা হয়।

ডিপিডিসির এই নিয়োগ বাংলাদেশের সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগ প্রক্রিয়ার একটি বৃহত্তর প্রেক্ষাপটের অংশ। অতীতে বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানে এমন নিয়োগ নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে, যেখানে রাজনৈতিক সংশ্লিষ্টতা বা ব্যক্তিগত স্বার্থের অভিযোগ উঠেছে। ডিপিডিসির এই নিয়োগও সেই ধারাবাহিকতার একটি অংশ বলে মনে হচ্ছে। তবে এটি একটি সুযোগও হতে পারে—সরকার যদি এই নিয়োগের পেছনের যুক্তি এবং প্রক্রিয়া স্পষ্টভাবে ব্যাখ্যা করে, তবে এটি জনগণের আস্থা ফিরিয়ে আনতে পারে।


সত্যের সন্ধানে

ডিপিডিসির পরিচালনা পর্ষদে মোহাম্মদ শফিকুল আলম এবং ওয়াসীম আলিমের নিয়োগ নিয়ে যে প্রশ্ন উঠেছে, তা কেবল ব্যক্তিগত নয়, বরং এটি একটি বৃহত্তর ইস্যু—সরকারি প্রতিষ্ঠানে নিয়োগের স্বচ্ছতা এবং জবাবদিহিতার বিষয়। আমরা এই প্রতিবেদনে কোনো ব্যক্তি বা প্রতিষ্ঠানের বিরুদ্ধে সরাসরি অভিযোগ করিনি, বরং জনগণের পক্ষ থেকে প্রশ্ন তুলেছি। এই প্রশ্নগুলোর উত্তর পাওয়া জনগণের অধিকার।

ডিপিডিসির এই নিয়োগ নিয়ে আপনার মতামত কী? আমরা আপনার চিন্তাভাবনা জানতে আগ্রহী।

(দ্য ব্যাঙ্গল লেন্সের এই প্রতিবেদনটি ঢাকা পাওয়ার ডিস্ট্রিবিউশন কোম্পানি লিমিটেডের ওয়েবসাইটে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে তৈরি করা হয়েছে।)


Leave a Comment

Comments

No comments yet. Why don’t you start the discussion?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *