গাজায় সাংবাদিক হাসান আসলিহের হত্যা: ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নাসের হাসপাতালে মর্মান্তিক ঘটনা

দ্য বেঙ্গল লেন্স নিউজ ডেস্ক

তারিখ: ১৩ মে, ২০২৫

খান ইউনিস, গাজা: গাজার খান ইউনিসে অবস্থিত নাসের হাসপাতালে চিকিৎসাধীন অবস্থায় সাংবাদিক হাসান আসলিহ ইসরায়েলি বোমাবর্ষণে নিহত হয়েছেন। গত রাতে হাসপাতালের একটি কক্ষে এই হামলা চালানো হয়, যেখানে তিনি এক মাস আগে তাকে লক্ষ্য করে চালানো আরেকটি হামলায় আহত হয়ে চিকিৎসা নিচ্ছিলেন। এই ঘটনার তথ্য বিবিসি’র প্রতিবেদন থেকে নিশ্চিত হওয়া গেছে, এবং বেঙ্গল লেন্স’র হাতে থাকা ভিডিও ফুটেজ এই হামলার ভয়াবহতার সাক্ষ্য বহন করে।

হাসান আসলিহের পরিচয় ও ইসরায়েলের অভিযোগ

ইসরায়েলি প্রতিরক্ষা বাহিনী (আইডিএফ) হাসান আসলিহকে “হামাসের একজন সদস্য” হিসেবে অভিযুক্ত করেছে, যিনি সাংবাদিকের ছদ্মবেশে কাজ করছিলেন। আইডিএফের দাবি, এই হামলার লক্ষ্য ছিল নাসের হাসপাতাল এলাকায় অবস্থিত একটি “কমান্ড অ্যান্ড কন্ট্রোল সেন্টারে” থাকা হামাসের “গুরুত্বপূর্ণ সন্ত্রাসী”। তবে, এই অভিযোগের কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ ইসরায়েল এখনো প্রকাশ করেনি। হাসান আসলিহ গাজায় সাংবাদিকতার মাধ্যমে যুদ্ধের ভয়াবহতা বিশ্বের কাছে তুলে ধরছিলেন, এবং তার কাজের জন্য তিনি স্থানীয় ও আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে পরিচিত ছিলেন।

হামলার প্রেক্ষাপট

এক মাস আগে হাসান আসলিহ প্রথমবারের মতো ইসরায়েলি হামলার শিকার হন, যার ফলে তিনি গুরুতর আহত হয়ে নাসের হাসপাতালে ভর্তি হন। চিকিৎসাধীন অবস্থায় তিনি ধীরে ধীরে সুস্থ হয়ে উঠছিলেন। কিন্তু গত রাতের হামলায় হাসপাতালের ওই কক্ষটি লক্ষ্য করে বোমাবর্ষণ করা হয়, যার ফলে তার মৃত্যু ঘটে। এই হামলা শুধু হাসান আসলিহের জীবনই কেড়ে নেয়নি, বরং হাসপাতালের নিরাপত্তা এবং সেখানে চিকিৎসাধীন অন্যান্য রোগী ও স্বাস্থ্যকর্মীদের জন্যও গুরুতর ঝুঁকি তৈরি করেছে।

গাজায় সাংবাদিকদের উপর নির্মম হামলা

বিবিসি’র তথ্য অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের চলমান যুদ্ধে এখন পর্যন্ত ২১৫ জন সাংবাদিককে ইচ্ছাকৃতভাবে হত্যা করা হয়েছে। এই ঘটনাগুলো সাংবাদিকদের জন্য যুদ্ধক্ষেত্রে ক্রমবর্ধমান ঝুঁকির ইঙ্গিত দেয়। সাংবাদিকরা যুদ্ধের সত্য চিত্র বিশ্বের কাছে তুলে ধরার জন্য নিরপেক্ষভাবে কাজ করেন, কিন্তু তাদের উপর এ ধরনের লক্ষ্যবস্তু হামলা সংবাদমাধ্যমের স্বাধীনতা এবং মানবাধিকারের জন্য গুরুতর হুমকি।

আন্তর্জাতিক প্রতিক্রিয়া ও তদন্তের দাবি

হাসান আসলিহের হত্যার ঘটনায় আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে স্বচ্ছ তদন্তের দাবি উঠেছে। সাংবাদিক সংগঠন এবং মানবাধিকার গোষ্ঠীগুলো এই হামলার তীব্র নিন্দা জানিয়েছে। তারা বলছে, হাসপাতালের মতো সুরক্ষিত এলাকায় এ ধরনের হামলা যুদ্ধাপরাধের পর্যায়ে পড়তে পারে। জাতিসংঘ এবং অন্যান্য আন্তর্জাতিক সংস্থার কাছে এই ঘটনার নিরপেক্ষ তদন্তের আহ্বান জানানো হয়েছে।

হাসান আসলিহের মৃত্যু গাজায় সাংবাদিকদের জন্য ক্রমবর্ধমান বিপদের একটি মর্মান্তিক স্মারক। এই ঘটনা শুধু একজন সাংবাদিকের জীবন কেড়ে নেয়নি, বরং সত্য প্রকাশের পথে যারা কাজ করছেন, তাদের জন্য একটি ভয়ঙ্কর বার্তা দিয়েছে। গাজার যুদ্ধে সাংবাদিকদের উপর হামলা বন্ধ করতে এবং তাদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে বিশ্ব সম্প্রদায়ের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্যসূত্র: বিবিসি

Show 1 Comment

1 Comment

  1. এই লেখাটি গাজায় সাংবাদিকদের ক্রমবর্ধমান ঝুঁকি নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে। হাসান আসলিহের মৃত্যু শুধু একজন সাংবাদিকের জীবন নেয়নি, বরং যুদ্ধের সত্য প্রকাশে আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের উদাসীনতাও ফুটে উঠেছে। আইডিএফের এই হামলার কোনো সুনির্দিষ্ট প্রমাণ না থাকা নিয়ে প্রশ্ন তোলা উচিত। হাসপাতালের মতো নিরাপদ এলাকায় হামলা করা কি আদৌ ন্যায়সঙ্গত ছিল? হাসান আসলিহের মতো সাংবাদিকরা যুদ্ধের ভয়াবহতা তুলে ধরার জন্য নিরলসভাবে কাজ করেন, কিন্তু তাদের নিরাপত্তা কে নিশ্চিত করবে? আন্তর্জাতিক সম্প্রদায়ের কাছে এই ঘটনার ন্যায়সঙ্গত তদন্তের দাবি অবশ্যই গুরুত্বপূর্ণ, কিন্তু কেউ কি সত্যিই এই তদন্তের ফলাফল নিয়ে কার্যকর পদক্ষেপ নেবে? এ ধরনের ঘটনাগুলো সাংবাদিকদের জন্য নিয়মিত হুমকি হয়ে দাঁড়াচ্ছে, কিন্তু এর সমাধান কোথায়?

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *